ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে, যার মাধ্যমে ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি উপগ্রহ যোগাযোগ কর্মসূচি GOVSATCOM-এ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আলোচনা শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি ২০২৫ সালের ২৮শে অক্টোবর পেশ করা হয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনের জন্য নির্ভরযোগ্য সংযোগ নিশ্চিত করা এবং বৃহত্তর ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্বের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হেনা ভির্ক্কুনেন এই উদ্যোগকে ইউরোপীয় সংহতি ও স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন, কারণ তিনি মনে করেন সুরক্ষিত সংযোগ ইউরোপের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। GOVSATCOM কর্মসূচিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচির একটি অংশ, যা নিরাপত্তা ও জরুরি মিশনের জন্য নির্ভরযোগ্য, সুরক্ষিত এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সরকারি উপগ্রহ যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি। এই কর্মসূচিটি ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্র এবং বেসরকারি পরিচালকদের স্যাটেলাইট সম্পদ একত্রিত করে সরকারি কর্তৃপক্ষকে পরিষেবা দেয়, বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংঘাতের মতো পরিস্থিতিতে যখন স্থলভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
এই পদক্ষেপটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান স্থগিত হওয়ার পটভূমিতে এসেছে, যা ইউক্রেনের জন্য বিকল্প মহাকাশ পরিষেবা উৎসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ইউক্রেন পূর্বেও ইউরোপীয় মহাকাশ উদ্যোগে আগ্রহ দেখিয়েছে; যেমন, এপ্রিল ২০২৫-এ তারা কপারনিকাস, স্পেস ওয়েদার ইভেন্টস এবং নিয়ার-আর্থ অবজেক্টস কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এছাড়াও, মার্চ ২০২৫-এ কমিশন বাণিজ্যিক ইইউ মহাকাশ পরিষেবাগুলিতে ইউক্রেনের প্রবেশাধিকারের জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব করেছিল।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিশনার আন্দ্রিয়াস কুবিলিয়াস এই পদক্ষেপকে আরও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যদিও ইউক্রেন ২০৩০ সালে চালু হওয়ার প্রত্যাশিত সুরক্ষিত যোগাযোগ নক্ষত্রপুঞ্জ IRIS2-এ অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে, GOVSATCOM-এ এর অন্তর্ভুক্তি একটি তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা সমাধান প্রদান করছে। এই কৌশলগত সমন্বয় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করার পাশাপাশি ইউরোপের নিজস্ব কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন সুরক্ষিত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পদের সমন্বয় সাধন করে বৃহত্তর পরিসরে সকলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
