১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দক্ষিণ কোরিয়ার গেয়ংজু শহরে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার আবহে ২১টি অর্থনীতির নেতাদের এই বৈঠকটি ঐকমত্য খোঁজার একটি মঞ্চ ছিল। সম্মেলনের সামগ্রিক পরিবেশ নির্ধারণকারী মূল ফলাফল ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য বিরোধের আংশিক প্রশমন, যা বৈঠকের ঠিক আগে অর্জিত হয়েছিল।
৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনা চেয়ারম্যান শি জিনপিং-এর মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা একটি অস্থায়ী চুক্তির জন্ম দেয়। এই চুক্তির ফলে উভয় দেশই সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা, যেমন পারস্পরিক শুল্ক এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়। এই এক বছরের জন্য নির্ধারিত সাময়িক যুদ্ধবিরতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে আসে। চুক্তির অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র ফেন্টানিলের উপর শুল্ক ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করেছে। অন্যদিকে, চীন বিরল মৃত্তিকা (rare earth metals) রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে এবং আমেরিকান সয়াবিন পুনরায় কেনা শুরু করতে রাজি হয়েছে। ইহওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিফ-এরিক ইজলি মন্তব্য করেছেন যে এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চূড়ান্ত অধিবেশনে অংশ না নিয়ে চলে যাওয়ার পর, চেয়ারম্যান শি জিনপিং বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের গ্যারান্টার হিসেবে বেইজিং-এর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। তাঁর ভাষণে শি জিনপিং একটি সাহসী প্রস্তাব উত্থাপন করেন: ওয়ার্ল্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (World Artificial Intelligence Cooperation Organization) প্রতিষ্ঠা করা, যা বেইজিং সাংহাইতে স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো এআই নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তৈরি করা, প্রযুক্তিটিকে 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি জনকল্যাণমূলক সম্পদ' হিসেবে তুলে ধরা। এটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
চেয়ারম্যান শি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং সহ অ্যাপেক নেতারা গেয়ংজু ঘোষণা গ্রহণ করেন। এই ঘোষণায় জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ, যেমন বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিম্ন জন্মহার মোকাবেলায় সহযোগিতার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যা দক্ষিণ কোরিয়াসহ এই অঞ্চলের বহু দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, শি জিনপিং এবং লি জে-মিয়ং-এর বৈঠকের পর কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়, যদিও পিয়ংইয়ং এই এজেন্ডা প্রত্যাখ্যান করেছে। ঘোষণাপত্রে টেকসই সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখার বিষয়েও ঐকমত্য দৃঢ় করা হয়।
অ্যাপেক, যা ২১টি অর্থনীতিকে একত্রিত করে এবং বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে, আবারও সংলাপের মঞ্চ হিসেবে তার ভূমিকা নিশ্চিত করেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যারা পূর্বে নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রবর্তক ছিল, তারা তাদের অবস্থানে পরিবর্তন দেখাচ্ছে, সেখানে চীন, যারা ২০২৬ সালের অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলন শেনজেনে আয়োজন করবে, তারা বৈশ্বিক শাসনের বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ়ভাবে প্রচার করছে। তারা প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই তাদের প্রভাবকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিটি সুযোগ ব্যবহার করছে।
