জেএমএ ২০২৫-এ ভি (কিম তাহিয়ুং) হলেন বছরের কণ্ঠস্বর

২০২৫ সালের ২৯শে নভেম্বর, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা এক অভূতপূর্ব মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ কণ্ঠস্বর এক সুরে বাঁধা পড়েছিল, আর সেই সুরের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিটিএস (BTS)-এর সদস্য ভি (কিম তাহিয়ুং)। এই দিন অনুষ্ঠিত হলো জুপিতার মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (Jupiter Music Awards), যেখানে তিনি চূড়ান্ত পর্বে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি ভোট পেয়ে ‘বর্ষসেরা পুরুষ শিল্পী’ পুরস্কারটি নিজের ঝুলিতে ভরেন। এই অর্জন তার ব্যতিক্রমী জনপ্রিয়তার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

এক সন্ধ্যায় বিটিএস-এর তিন তারকার জয়যাত্রা

জেএমএ-২০২৫ মঞ্চে বিটিএস-এর তিন সদস্য তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। এটি কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পুরো ব্যান্ডের সম্মিলিত শক্তির এক উজ্জ্বল প্রতিফলন। প্রতিটি সদস্য যেন স্বতন্ত্রভাবে উজ্জ্বল, কিন্তু সম্মিলিতভাবে তারা এক অপ্রতিরোধ্য সাংস্কৃতিক ঢেউ তৈরি করেন। বিজয়ীরা হলেন:

• ভি — বর্ষসেরা পুরুষ শিল্পী

এই সাফল্য প্রমাণ করে যে বিটিএস একটি সম্মিলিত শক্তি হিসেবে কাজ করে, যেখানে প্রত্যেক সদস্য আলাদা আলাদা সুর হলেও, তাদের সম্মিলিত অনুরণন বিশ্বজুড়ে এক শক্তিশালী তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এটি কেবল গানের সাফল্য নয়, এটি ফ্যানদের প্রতিশ্রুতিরও জয়গান।

ফোর্বস কোরিয়া: খ্যাতির আরও একটি মাপকাঠি

এই সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই, ২০২৫ সালের ১লা ডিসেম্বর, ফোর্বস কোরিয়া তাদের বার্ষিক র‍্যাঙ্কিং ‘কোরিয়ান আইডলস অফ দ্য ইয়ার ২০২৫’ প্রকাশ করে। এই তালিকায় ভি স্থান পান ৫ নম্বরে, যা তাকে এই তালিকার সর্বোচ্চ স্থানাধিকারী পুরুষ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই মর্যাদাপূর্ণ র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়েছিল নিম্নলিখিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে, যা শিল্পীর বহুমুখী প্রভাবকে তুলে ধরে:

• স্ট্রিমিং ডেটা: ৫০%

এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে ভি শুধুমাত্র সঙ্গীতের মাধ্যমেই নয়, বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং জনসমর্থনের দিক থেকেও শীর্ষে অবস্থান করছেন।

বিটিএস-এর পরবর্তী পদক্ষেপ

এই সাফল্যের মাঝেও, বিটিএস তাদের ভক্তদের জন্য এক দারুণ খবর নিশ্চিত করেছে। তারা ছয় বছরের মধ্যে তাদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই প্রত্যাশিত অ্যালবামটি ২০২৬ সালের বসন্তে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এই নতুন সঙ্গীতের আগমনীর পরই বিশ্বজুড়ে এক বিশাল ট্যুর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিশ্ব সঙ্গীত মানচিত্রে নতুন সুরের জোয়ার আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই সংবাদ বিশ্ব সঙ্গীতে কী নতুন মাত্রা যোগ করল?

এই ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে এক গভীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছে: সম্মিলিত হৃদয়ের শক্তি। দেড় মিলিয়ন ভোট কেবল একটি সংখ্যা নয়; এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফ্যান কমিউনিটিগুলোর একযোগে স্পন্দিত হওয়ার প্রমাণ। বিটিএস-এর ফ্যানডম আবারও প্রমাণ করল যে যখন মানুষ একটি সাধারণ অনুভূতিকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয়, তখন তা নিছক পরিসংখ্যান না থেকে এক শক্তিশালী সাংস্কৃতিক শক্তিতে পরিণত হয়।

অন্যদিকে, এই ঘটনাটি সঙ্গীতের ভৌগোলিক সীমানা ভেঙে দেওয়ার বার্তা বহন করে। ২৯শে নভেম্বর দেখিয়ে দিল যে সঙ্গীত কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সম্পত্তি নয়। এটি আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে—জাকার্তা, সিউল, লস অ্যাঞ্জেলেস, চার্ট এবং শহরের মধ্য দিয়ে। ভি এখানে এমন এক সংযোগবিন্দু হয়ে উঠেছেন, যেখানে স্থানীয় প্রতিভা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে।

পরিশেষে বলা যায়, এই দিনটি বিশ্বকে এক নরম কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয় দিয়েছে: সংস্কৃতি কেবল পূর্বনির্ধারিত রিলিজের মাধ্যমে চালিত হয় না, বরং সেই মুহূর্তগুলোর মাধ্যমে চালিত হয় যখন কোটি কোটি মানুষ একটি একক সুরকে বেছে নেয় এবং তাকে বিশ্বের সম্মিলিত ছন্দের অংশ করে তোলে।