ইডিয়াকারান যুগে পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর নাটকীয় বিচরণের ব্যাখ্যা দিল ইয়েল বিজ্ঞানীদের নতুন মডেল

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক দল 'সায়েন্স অ্যাডভান্সেস' জার্নালে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পর্কিত যুগান্তকারী তথ্য প্রকাশ করেছে। এই তথ্যগুলি ইডিয়াকারান সময়কালকে কেন্দ্র করে, যা আনুমানিক ৬৩০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই ভূতাত্ত্বিক যুগটি বহু দশক ধরে ভূ-পদার্থবিদদের কাছে এক অমীমাংসিত রহস্য ছিল। কারণ এই সময়ের শিলাগুলিতে সংরক্ষিত চৌম্বকীয় স্বাক্ষরগুলি ছিল অপ্রত্যাশিত, যা কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যায় আসত না। অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক যুগে দেখা সুশৃঙ্খল বিন্যাসের তুলনায় সেই সময়ে চৌম্বক ক্ষেত্র অস্বাভাবিক পরিবর্তনশীলতা প্রদর্শন করেছিল।

এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মরক্কোর অ্যান্টি-অ্যাটলাস ম্যাসিফ। সেখানে আগাদির-এর মোহাম্মদ ভি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সুসংরক্ষিত আগ্নেয় স্তরগুলি খুঁজে পান। দলটি ইয়েলে থাকা অত্যন্ত সংবেদনশীল পরীক্ষাগার সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই স্তরগুলিতে 'আবদ্ধ' চৌম্বকত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ স্তরবিন্যাসগত বিশ্লেষণ পরিচালনা করে। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলি যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্রের আচরণ আধুনিক সময়ের মতো হবে বলে ধরে নিয়েছিল, তার বিপরীতে এই দলটি শিলাগুলির সঠিক বয়স নির্ধারণ করে এবং প্যালিওম্যাগনেটিক পরিমাপের জন্য উচ্চ-রেজোলিউশনের নমুনা সংগ্রহ করে।

প্রাপ্ত প্রমাণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে প্রধান চৌম্বকীয় পরিবর্তনগুলি লক্ষ লক্ষ বছরের পরিবর্তে হাজার হাজার বছরের স্কেলে ঘটেছিল। এই আবিষ্কার অতি-দ্রুত টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধির অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি তত্ত্বগুলিকে বাতিল করে দেয়। বিশ্লেষণে একটি সুসংগঠিত, যদিও চরম অস্বাভাবিক, কাঠামো প্রকাশিত হয়, যা গবেষকদের মডেলিংয়ের জন্য একটি পরিসংখ্যানগত সরঞ্জাম তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই মডেলটি প্রস্তাব করে যে চৌম্বকীয় মেরুগুলি দ্রুত লাফ দিয়েছিল, সম্ভবত পৃথিবীর গোলক অতিক্রম করে। ইয়েলের অধ্যাপক ডেভিড ইভান্স, যিনি এই কাজের অন্যতম লেখক, জোর দিয়েছিলেন যে তারা একটি নতুন মডেল উপস্থাপন করছেন যা ক্ষেত্রের পরিবর্তনশীলতার মধ্যে অভ্যন্তরীণ কাঠামো খুঁজে বের করে, এটিকে এলোমেলো বিশৃঙ্খলা হিসাবে দেখার পরিবর্তে।

আরও জানা যায়, ইডিয়াকারানের মাঝামাঝি সময়ে (আনুমানিক ৫৯১–৫৬৫ মিলিয়ন বছর আগে) গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র তার স্বাভাবিক শক্তির মাত্র দশমাংশ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এটি জলবায়ু এবং বিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারত, সম্ভবত পৃষ্ঠে বিকিরণের প্রভাব বাড়িয়ে দিত। এই গবেষণাটি কেবল অতীতের ভুল বোঝাবুঝিগুলি সংশোধন করে না, বরং এটি শিলাগুলির প্রাচীনতম রেকর্ড থেকে শুরু করে বর্তমান দিন পর্যন্ত কোটি কোটি বছর ধরে বিস্তৃত প্লেট টেকটোনিক্সের একটি সামগ্রিক চিত্র তৈরির পথ প্রশস্ত করে। দলটি দ্বারা তৈরি নতুন পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিটি ইডিয়াকারান সময়ের মহাদেশ এবং মহাসাগরগুলির নির্ভরযোগ্য মানচিত্র তৈরির মূল চাবিকাঠি হবে।

উৎসসমূহ

  • enikos.gr

  • Science Advances

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।