রুটজার্স রসায়নবিদদের উদ্ভাবন: প্রাকৃতিক পলিমারের অনুকরণে স্ব-ধ্বংসকারী প্লাস্টিক

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

নিউ ইয়র্কের বিয়ার মাউন্টেন স্টেট পার্কে পদযাত্রার সময় পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দেখে রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ ইউওয়েই গু একটি নতুন কৌশল নিয়ে আসেন, যা প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার পথ প্রশস্ত করতে পারে। এই দৃশ্য তাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে যে কেন কৃত্রিম পলিমারগুলি প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ডিএনএ (DNA) এবং আরএনএ (RNA)-এর মতো দীর্ঘ-শৃঙ্খলযুক্ত প্রাকৃতিক অণুগুলির বিপরীতে চিরকাল টিকে থাকে, যেখানে প্রাকৃতিক পলিমারগুলি স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে যায়। গু এবং তার গবেষক দল একটি রাসায়নিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে প্লাস্টিককে এমনভাবে তৈরি করা যায় যাতে তারা নির্দিষ্ট গতিতে স্ব-ধ্বংস হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই উদ্ভাবনী কৌশলটির নাম দেওয়া হয়েছে 'কনফরমেশনাল প্রিঅর্গানাইজেশন', যা প্রাকৃতিক পলিমারগুলির অনুকরণ করে। এই পদ্ধতিতে এমন সহায়ক গোষ্ঠী (helper groups) অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা প্রয়োজন অনুসারে রাসায়নিক বন্ধনগুলিকে ভাঙার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে, যেখানে নতুন বন্ধন তৈরি করা হয়, এই কৌশলটি বিদ্যমান বন্ধনগুলির স্থানিক বিন্যাস পরিবর্তন করে, যাতে সেগুলি কঠোর রাসায়নিক বা তাপের প্রয়োজন ছাড়াই দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে পচনের জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষকরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিকের জীবনকাল দিন, মাস বা বছর হিসাবে প্রকৌশল করা সম্ভব, যা উপাদানের কার্যকারিতার সাথে তার জীবনকালকে মেলাতে সাহায্য করে। এই গবেষণাটি ২০২৫ সালের ২৮শে নভেম্বর নেচার কেমিস্ট্রি (Nature Chemistry) জার্নালে প্রকাশিত হয়।

এই কৌশলটি অনেকটা কাগজের একটি অংশকে ভাঁজ করার মতো, যা একটি নির্দিষ্ট ভাঁজের রেখা বরাবর সহজে ছিঁড়ে যায়; একইভাবে, কাঠামোর 'পূর্ব-ভাঁজ' (pre-folding) করার মাধ্যমে প্লাস্টিক স্বাভাবিকের চেয়ে হাজার গুণ দ্রুত ভেঙে যেতে পারে। রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইউওয়েই গু, যিনি ২০২৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, ম্যাক্রোমলিকুলার বায়োমিমিক্রি (macromolecular biomimicry) নিয়ে গবেষণা করেন, যার লক্ষ্য হলো জৈবিক জটিলতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে এমন ব্যবস্থা নকশা করা। এই নতুন পদ্ধতির একটি অতিরিক্ত সুবিধা হলো এতে একটি সুইচ ফাংশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অতিবেগুনী রশ্মি (UV light) বা ধাতব আয়নের উপস্থিতিতে পচন প্রক্রিয়াকে নির্দিষ্টভাবে সক্রিয় করতে পারে, যা উপাদানটির উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। প্রাথমিক পরীক্ষাগার পরীক্ষাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে এই ভাঙন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন তরল পদার্থ বিষাক্ত নয়, যদিও এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা চলছে।

এই উদ্ভাবনটি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, বিশেষত যখন ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত এক চতুর্থাংশের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার না হয়ে পুড়িয়ে ফেলা বা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। এই কৌশলটি এমন প্লাস্টিক তৈরির পথ দেখায় যা তার উদ্দেশ্য পূরণ করার পর প্রাকৃতিকভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং দলটি বর্তমানে বাণিজ্যিকীকরণ ও সামঞ্জস্যতা পরীক্ষার জন্য সহযোগিতার সন্ধান করছে। এই গবেষণায় কনফরমেশনাল প্রিঅর্গানাইজেশন ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলির স্থানিক বিন্যাস এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যে এটি পলিমারের পচনের হারকে প্রভাবিত করে এবং গতি বাড়িয়ে দেয়, যা প্রচলিত পদ্ধতির একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা—স্থায়িত্ব এবং সহজে পচনশীলতার মধ্যেকার আপসকে অতিক্রম করে।

গবেষকরা দেখিয়েছেন যে এই কৌশলটি রৈখিক পলিমার এবং বাল্ক থার্মোসেটিং নেটওয়ার্ক উভয়েরই প্রোগ্রামযোগ্য পচন সক্ষম করে, যা পরিবেষ্টিত পরিস্থিতিতেও সম্ভব এবং পচনশীল বন্ধনের রাসায়নিক পরিচয় পরিবর্তন না করেই এর হারকে বহু গুণ পরিবর্তন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য প্যাকেজিংয়ের মতো স্বল্প-ব্যবহারের জিনিসগুলি কয়েক দিনের মধ্যে ভেঙে যেতে পারে, অন্যদিকে গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো দীর্ঘস্থায়ী আইটেমগুলি বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে, যা প্রস্তুতকারকদের পণ্যের জীবনকাল তাদের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য করার সুযোগ দেয়। এই পদ্ধতিটি কেবল স্থায়িত্ব এবং পচনশীলতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বকেই সমাধান করে না, বরং এটি এমন পরিবেশ-বান্ধব প্রক্রিয়াকরণের পথও খুলে দেয় যেখানে কঠোর রাসায়নিক বা তাপীয় উদ্দীপনা ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত পচন ঘটানো যায়, যা বৃত্তাকার উপাদান নকশার জন্য অপরিহার্য। এই গবেষণায় ইউইন, ঝাং এবং ঝোউ-এর মতো গবেষকরাও জড়িত ছিলেন, যা প্রমাণ করে যে আণবিক স্তরে নকশার মাধ্যমে স্থায়িত্ব এবং পরিবেশগত দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য আনা সম্ভব। এই উদ্ভাবনটি আধুনিক প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটিকে মোকাবিলা করার জন্য একটি নতুন রাসায়নিক কৌশল উপস্থাপন করে, যা দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে তাপ বা কঠোর রাসায়নিক ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় হতে পারে।

উৎসসমূহ

  • Environmental News Network (ENN)

  • Rutgers University

  • ScienceBlog.com

  • Rutgers University

  • Reddit

  • Mirage News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

রুটজার্স রসায়নবিদদের উদ্ভাবন: প্রাকৃতিক প... | Gaya One