আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে বিশাল মিঠা পানির ভান্ডার আবিষ্কৃত
সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17
বিজ্ঞানীরা আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে নিউ জার্সি থেকে মেইন পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল মিঠা পানির ভান্ডার আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি বিশ্বব্যাপী জল সংকট মোকাবেলায় একটি উল্লেখযোগ্য সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। সাগরের নিচে মিঠা পানির অস্তিত্ব ১৯৭০-এর দশক থেকেই জানা ছিল, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে তেল অনুসন্ধানের সময় সমুদ্রতল থেকে কয়েকশ মিটার নিচে মিঠা পানির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে, এই জলভান্ডারের সম্পূর্ণ ব্যাপ্তি এবং পরিমাণ সাম্প্রতিক তদন্তের আগ পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল না।
২০১৯ সালে, উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি "আশ্চর্যজনক আবিষ্কার" ঘোষণা করেন। তারা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে ম্যাসাচুসেটস থেকে নিউ জার্সি পর্যন্ত সমুদ্রের নিচে মিঠা পানির একটি বিশাল অংশ চিহ্নিত করেন। এই আবিষ্কারটি বিশ্বের বৃহত্তম এমন ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আবিষ্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, এক্সপিডিশন ৫০১ প্রকল্পের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী দল এই ঘটনাটি আরও অন্বেষণ করার জন্য একটি মিশনে যাত্রা করে। মে ২০২৫ সালে, তারা একটি ড্রিলিং প্ল্যাটফর্ম সজ্জিত জাহাজে করে ব্রিজপোর্ট, কানেকটিকাট থেকে যাত্রা শুরু করে। তিন মাস ধরে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক উপকূলের বিভিন্ন স্থানে সমুদ্রতল থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার গভীরে নমুনা সংগ্রহ করে।
প্রাথমিক ফলাফলগুলি ইঙ্গিত দেয় যে আবিষ্কৃত পানির লবণাক্ততা সমুদ্রের পানির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দ্বারা পানীয় জলের জন্য প্রস্তাবিত মাত্রার কাছাকাছি। পানির বয়স এবং উৎস সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য আরও বিশ্লেষণ চলছে। কলোরাডো স্কুল অফ মাইন্সের ভূতত্ত্বের অধ্যাপক এবং অভিযানের নেতা ব্র্যান্ডন ডুগান (Brandon Dugan) এর মতে, পানির বয়স ২০০ থেকে ২০,০০০ বছর হতে পারে। কম বয়সী পানি একটি পুনরায় পূরণযোগ্য উৎস নির্দেশ করতে পারে, যখন পুরানো পানি একটি সীমিত সম্পদ যা শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যেতে পারে।
এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী মিঠা পানির অভাব পূরণে একটি আশাব্যঞ্জক দিক উন্মোচন করেছে। তবে, এর ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এই ভান্ডারটি সম্ভবত ওগালালা জলভান্ডারের (Ogallala Aquifer) মতো বিশাল হতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট প্লেইনস জুড়ে বিস্তৃত। এই আবিষ্কারটি বিশ্বব্যাপী জল সংকটের একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে জাতিসংঘের মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মিঠা পানির বৈশ্বিক চাহিদা সরবরাহের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি হবে। এই বিশাল ভান্ডারটি ব্যবহারযোগ্য সম্পদে পরিণত হবে কিনা তা নির্ভর করবে চলমান বিশ্লেষণ এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর।
উৎসসমূহ
as
The Washington Post
KTVZ
Sustainability Times
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
