লাতিন আমেরিকায় প্রথম পোলার বিয়ার শাবক নূরের প্রথম জন্মদিন উদযাপিত হলো সাও পাওলোতে
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
গত ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে, সাও পাওলোর বিখ্যাত ‘আকোয়ারিয়াম সাও পাওলো’ চিড়িয়াখানায় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই দিনটি ছিল নূরের প্রথম জন্মদিন, যে শাবকটি লাতিন আমেরিকার মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রথম মেরু ভালুক বা পোলার বিয়ার (*Ursus maritimus*) হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই উদযাপন মহাদেশীয় স্তরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এই উপলক্ষে দর্শকদের জন্য একটি বিশেষ কার্যক্রম রাখা হয়েছিল, যেখানে বিরল প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
জন্মদিনের উৎসবের অংশ হিসেবে ‘নূরের কোণ’ নামে একটি নতুন স্থান উন্মোচন করা হয়। এখানে অতিথিরা পোলার বিয়ার শাবকটির জীবনের প্রথম বছর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং ছবি দেখতে পান। গত ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ সালে জন্ম নেওয়া নূরের প্রথম বার্ষিকীতে তার ওজন দাঁড়িয়েছে ৯৩ কিলোগ্রামে, যা তার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পর্যায় সফলভাবে অতিক্রম করার প্রমাণ দেয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা জন্মদিনের উপহার হিসেবে নূরের জন্য বিশেষ বরফের কেক পরিবেশন করেন, যা আপেল ও গাজরের মতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এছাড়াও, নূরের গল্প নিয়ে একটি শিশুতোষ বই প্রকাশ করা হয়, যার বিক্রির অর্থ সরাসরি পোলার বিয়ার সংরক্ষণ কর্মসূচিতে দান করা হবে।
নূরের জন্ম দশ বছরব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ফল। এই অংশীদারিত্ব ‘আকোয়ারিয়াম সাও পাওলো’ এবং রাশিয়ার কাজান চিড়িয়াখানার মধ্যে স্থাপিত। নূরের বাবা-মা, স্ত্রী অরোরা এবং পুরুষ সদস্য পেরেগ্রিনো, ২০১৫ সালে কাজান থেকে ব্রাজিলে আসেন। এটি ছিল বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সহযোগিতার অংশ এবং একই সাথে কাজান চিড়িয়াখানার সংস্কার কাজের জন্য দুই বছরের জন্য তাদের স্থানান্তর করা হয়েছিল। পশুচিকিৎসক দল জানিয়েছে যে নূরের মধ্যে ক্রমশ স্বাধীনতা বাড়ছে এবং সাঁতার কাটার দক্ষতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, যার ফলে সে জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাসগুলো সফলভাবে পার করতে পেরেছে।
বর্তমানে নূরের খাদ্যাভ্যাসে মায়ের দুধের পাশাপাশি কঠিন খাবারও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সে সক্রিয়ভাবে শূকরের মাংস, মুরগি এবং মাছ খাচ্ছে, যা তার বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। স্বাভাবিকভাবেই, মায়ের দুধ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং আলাদা হয়ে যাওয়া প্রায় দুই বছর বয়সে ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই প্রজাতির স্বাভাবিক বিকাশের সময়কালের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাজান চিড়িয়াখানার বিশেষজ্ঞরা পূর্বে উল্লেখ করেছিলেন যে পোলার বিয়ারের ক্ষেত্রে তাদের পুরু চর্বির স্তরের কারণে গর্ভধারণ শনাক্ত করা কঠিন, তাই স্ত্রী অরোরাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি ছিল।
এই ঘটনাটি *Ursus maritimus* সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার গুরুত্বকে আরও একবার সামনে এনেছে। বিশ্বজুড়ে এই প্রজাতির সংখ্যা ২২ থেকে ৩১ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার রাশিয়ায় বসবাস করে। পূর্বাভাস বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পোলার বিয়ারের সংখ্যা ৩০% হ্রাস পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, নতুন জলবায়ু অঞ্চলে, বিশেষ করে এমন স্থানে সফল প্রজনন, প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য এবং স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। কাজান চিড়িয়াখানার সংস্কার চলাকালীন সময়ে, ৯ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ‘আকোয়ারিয়াম সাও পাওলো’ কাজানের দম্পতির জন্য বিশেষভাবে তৈরি খাঁচা সরবরাহ করেছিল, যা আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উৎসসমূহ
globo.com
CNN Brasil
VEJA SÃO PAULO
Agência Brasil
Cotia e Cia
Diário do Grande ABC - Notícias e informações
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
